
প্রকাশিত: Tue, Dec 20, 2022 4:27 AM আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 12:12 PM
পেলে, ম্যারাডোনা বা মেসিরা জীবনের কষ্ট-যন্ত্রণা, বিভেদ-বৈষম্য ভুলে আনন্দ করতে শেখায়
রউফুল আলম
আর্জেন্টিনার জয়ের পর শুধু ম্যারাডোনাকে মিস করেছি। কৈশোরের হিরো ডিয়াগো ম্যারাডোনা। ম্যারাডোনা হাত দিয়ে গোল দিয়েছেন, ম্যারাডোনা ড্রাগ নিয়েছেনÑ এগুলো তো বড়োদের কথা। কিশোর মনে ম্যারাডোনা ছিলেন শুধুই নায়ক। অদেখা নায়ক, অবশেসন। ১৯৯৪ সালে, স্কুলে পড়ার সময়, প্রথম ম্যারাডোনার খেলা দেখা। আমাদের রুল করা খাতার মলাটে ম্যারাডোনার ছবি। সেই ছবি দেখে আমরা খাতা কিনতাম। সেই ছবি নিয়ে কৈশোরে কতো উত্তেজনা, কতো গাল-গল্পো। আমাদের মাটির ঘরের দেওয়ালে, ম্যারোডোনার ছবি কতো ভঙ্গিমার। ৯৪-এর বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে কি আছে? নেই বিদ্যুৎ, নেই রাস্তা-ঘাট, নেই ইন্টারনেট, নেই সোশ্যাল মিডিয়া। ক্রিকেটে বাংলাদেশের কোনো নায়ক নেই তখন। আবাহনী-মোহামেডান তখনো জেগে আছে কিছুটা। সেই সময়েও ম্যারোডোনা পৌঁছে গেছে নিরেট গ্রামে। আমাদের কিশোর মন একজন নায়ক খুঁজে পেলো। খবরের কাগজে ম্যারাডোনার ছবি দিয়ে শিরোনামে লেখা ‘ওরা আমাকে এতো মারে কেন?’ সেই শিরোনাম পড়ে আমারা বিহ্বল হয়ে যাই। আমাদের শুধু মনে হয়, ম্যারাডোনার ওপর অবিচার করা হচ্ছে। তাকে খেলতে দেওয়া হয় না। তাকে লাল কার্ড দেওয়া হয়। নায়কের বিমর্ষিত চেহারায়, আমাদের কিশোর মন চুপসে থাকে খুব।
আপনি যদি ভারতের ৮৩’ মুভিটা দেখেন তাহলে বুঝবেন খেলা কি করে কখনো কখনো একটা জাতিকে জাগায়। বাঁচিয়ে রাখে, বাঁচতে শেখায়। কী করে দুঃখ ভোলায়। কি করে জীবনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শেখায়। আসলে খেলা তো একটা বাহক, অন্তরালে থাকে নায়ক। ভারতের কোটি কোটি মানুষ যখন ক্ষুধা পেটে টেন্ডুলকারের ব্যাটিং দেখতো, তখন ক্ষুধা ভুলে উল্লাস করতো। টেন্ডুলকার তাদের জীবনের দেবতা হয়ে উঠেন। জীবনানন্দের দেবতা হয়ে উঠেন। কারণ আর কিছুতো তাকে ক্ষুধা পেটেও উল্লাস করতে জাগায় না। ওই যে ভারত, ভারত করে চিৎকার দিয়ে ওঠে, তখন সে ভুলে যায় মায়ের রোগের কথা, সন্তানের ক্ষুধার কথা, বাবার অপমানের কথা। পেলে যখন ব্রাজিলের হয়ে জেগে উঠলো, তখন ব্রাজিলের মানুষের দুঃখ দুর্দশা, খাবার নেই- দারিদ্রতা কী কামড় দিয়ে জেকে আছে। তখনই পেলের একটা গোলে ব্রাজিলিয়ানরা চিৎকার করে উঠতো। পেলে সমগ্র ব্রাজিলের মানুষদের বাঁচতে শিখিয়েছেন। জীবন লড়াইয়ে টিকে থাকতে শিখিয়েছেন। ভাবতে শিখিয়েছেন, ব্রাজিলও বিশ্বসেরা হতে পারে। সেজন্যই নায়ক থেকে মহানায়কে পরিণত হয়েছিলেন পেলে। তাকে নিয়ে বাংলাদেশের পাঠ্য বইতেও গল্প ছিলো, ম্যারাডোনাও তাই। আর্জেন্টিনার মানুষদের নতুন করে জাগিয়েছেন ম্যারাডোনা। আর্জেন্টাইরা তাকে দেবতার মতো ভালোবাসতো। এমন মহানায়কদের গল্প, ছবি, বিজয়কাব্য ছড়িয়ে পড়ে দূরতম দেশে। দূরতম সমাজে। দিনশেষে মানুষ চায় আনন্দ।
চায় বেঁচে থাকার অহংকার। রাজা হোক, প্রজা হোক, রাজ্যের সবচেয়ে খারাপ মানুষ কিংবা নিষ্পাপ শিশু হোক। মানুষের জীবনের সবচয়ে বড়ো হাহাকার হলো আনন্দের জন্য হাহাকার, গৌরবের জন্য হাহাকার। এই যে পেলে, ম্যারাডোনা, মেসি তাঁরা জীবনের কষ্ট-যন্ত্রণা, বিভেদ-বৈষম্য কে ভুলে আনন্দ করতে শেখায়। মানুষের মগজে সহজেই ডোপামিন নিঃসরণের কাজ করে দিতে পারে। তাদের উল্লাসে মানুষ ধর্মের বিভেদ ভুলে যায় মুহূর্তের জন্য। তাঁদের বিজয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণা ভুলে যায়। তাদের বিজয় অবহেলিত জাতিকে শক্তি দেয়। শেখায় আমাদের জাতিও বিশ্ব জয়ের সামর্থ্য রাখে। মানুষের ভিতর জাতীয়তার অহংকার জাগিয়ে তোলে। তাই তাঁরা হয়ে উঠে অসংখ্য মানুষের নায়ক। আমরা বড়ো হয়ে গেছি। নায়ক বাছাই করতে শিখেছি। কিন্তু সেই যে অবুঝ কিশোর হৃদয়ে একজন নায়ক ঠাঁই করে নিয়েছিলো, তাকে তো আর আসন থেকে নামানো যায়নি। দিক সে হাত দিয়ে গোল, নিক সে ড্রাগ কিংবা হোক সে সহস্র মাইল দূরের কোনো এক দেশের খর্বকায় মানুষ। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
